রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের চিড়িয়াখানা রোডে শাহ হোটেলের মালিক মো. রবিউল ইসলাম পুনরায় হোটেল চালুর জন্য তার একজন বাবুর্চির দরকার ছিল। ৫ অক্টোবর সাবেক কর্মস্থল আশুলিয়া এলাকায় পরিচিতজনদের কাছে বাবুর্চির খোঁজে যান। ফেরার পথে নবীনগর এলাকা থেকে নিরালা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। কিছুক্ষণ পর তার সর্বস্ব লুটে নেয়ার চেষ্টা করা হয়।
রবিউল ভেবেছিলেন চিৎকার করলে অন্য যাত্রীরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন। এজন্য ধস্তাধস্তিও শুরু করেন। কিন্তু ওই বাসে থাকা ২২ জন ছিল ছদ্মবেশি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। ফলে ডাকাতদের হাতে তাকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়।
এ ঘটনায় ডাকাত দলের প্রধান পটুয়াখালীর বশির মোল্লাসহ নয়জনকে গ্রেফতার করার পর এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
Read More News
বুধবার সাভার এলাকা থেকে বশিরকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বশির। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাভার, ধামরাই ও ডেমরা এলাকা থেকে বাকি ডাকাতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করাতে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয়। অন্য ডাকাতরা হল- শেখ হাফিজ (৩৫), আনোয়ার হোসেন (৩৫), আমির হোসেন (২৮), আল আমিন (২৮), জুয়েল (৩২), মো. নঈম (২২), তপন (২৮) ও নাজমুল (৩০)।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে নবীনগর থেকে রবিউলকে বাসে তোলা হয়। বাসে ওঠার পর ডাকাতির সময় চিৎকার ও ধস্তাধস্তি করেন রবিউল। ডাকাত দলের কয়েকজন রবিউলকে চেপে ধরে কাপড় দিয়ে তার মুখ বেঁধে ফেলে। এতেও কাজ না হওয়ায় বশির ‘হুইল রেঞ্জ’ দিয়ে তাকে আঘাত করে। এতে বাসের মধ্যে মারা যান রবিউল। এরপর নির্জন স্থান বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে তার লাশ ফেলে চলে যায় ডাকাতরা।
এদিকে বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে রাত ১২টার দিকে রবিউলের মা রেখা বেগম তার মোবাইল ফোনে কল দেন। অপর প্রান্ত থেকে এক অপরিচিত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে জানান, এ নম্বরের মালিক খুন হয়েছেন। তার লাশ হেমায়েতপুরে রাখা হবে। একথা বলে কল কেটে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর রবিউলের মোবাইল ফোনটি ভেঙে ড্রেনে ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। পরের দিন সকালে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। রবিউলের স্ত্রী হাফিজা মর্গে স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন।
পিবিআই প্রধান জানান, ৪ অক্টোবর ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে চলা নিরালা পরিবহনের একটি বাস ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে তিনদিনের জন্য ভাড়া করেন বশির। বাসটি ভাড়া নেয়ার পর নিরালা পরিবহনের স্টিকার তুলে ঢাকা-দৌলতদিয়া-খুলনা লিখে ডাকাত দলের অন্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হন। চার গরু ব্যবসায়ী ও এক দম্পতিসহ কয়েকজনের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে রাতে দৌলতদিয়ায় অবস্থান করেন। পরদিন ৫ অক্টোবর দৌলতদিয়া থেকে ফেরার পথে রবিউলকে বাসে তুলে ডাকাতরা।
ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, ডাকাত দলের প্রধান বশির ২০ বছর ধরে ডাকাতি করছে। একটি মামলায় ২৬ মাস জেল খাটার পর এ ঘটনার তিন মাস আগে সে ছাড়া পায়। মূলত ক্রাইম পেট্রোল দেখে ডাকাতির এ কৌশল রপ্ত করে বশির। পরিকল্পনা মতো আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ২২ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে এ কাজে নামেন সে। তাদের কেউ চালক, কেউ হেলপার, কেউ যাত্রী বেশ ধরে থাকত। রাস্তা থেকে যাত্রী তোলার পর সবর্স্ব লুট করে নির্জন এলাকায় নামিয়ে দিত অথবা হত্যা করে নির্জন জায়গায় ফেলে দিত।
ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার আরও জানান, এ চক্রের আরও সদস্যের নাম জানা গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।